জানালা

জানালা

-রিতম কর

 

 

প্রত্যেক বাড়িতে বিশেষ একটা জানালা থাকে। না না,বিশেষ মানে আকারে বড়ো, সুন্দর সাজানো, মোটেই এরকম কিছু নয়। বাইরের মানুষের কাছে ওটা বাড়ির আর পাঁচটা জানালার মতোই খুব সাধারণ। কিন্তু বাড়ির ছেলেটার বা মেয়েটার কাছে ওই জায়গাটুকু বড্ড কাছের,বড্ড নিজের। কারণ জানালাটা অনেক গল্প জানে যে..! ছোটবেলায় মাকে লুকিয়ে দুধটুকু টুক করে বাইরে ফেলে দেওয়া বা বাইরের কৃষ্ণচূড়াটায় শালিক গুলোর কচাকচি শুনতে শুনতে শীতের ছোট্ট দুপুরটা পার করে ফেলা―ওটার পাশের ওই শ্যাওলা ধরা পাঁচিলটা টপকেই তো বন্ধুদের যত গোপন আনাগোনা।একটু বড় হতেই সামনের বাড়ির নীলাকেই নীলাঞ্জনা ভেবে- ‘মেরে সামনেওয়ালি খিড়কি পে এক চাঁদ কা টুকরা রেহেতা হ্যায়…’। ক্লাস টেনে প্রেমে আছাড় খেয়ে প্রথম মন ভাঙার সাক্ষীও তো ছিল ওই জানালাটাই!

ছাদে গিয়ে মা বৃষ্টিতে ভিজতে দেয়নি তো কি! গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বৃষ্টি নিজেই এসে ছুঁয়ে দিয়ে গেছে বারবার।পর্দার আড়ালে আলোর আনাগোনাটাকে মুঠোফোনে বন্দি করতে চেয়েছি কতবার। বাবা বকলে, মিষ্টি মেয়েটা রাগ করে বসে থেকেছে ওখানেই। ওখানেই গিটারে গানে, হেডফোন কানে কখনো হাসিয়েছে অনুপম, কখনো কাঁদিয়েছে অরিজিৎ। মাঝে মা একবার রাগ করে জানালাটা বন্ধ করতে বললেও হার মানতে হয়েছে জেদের কাছে।

বয়সের হিসাবে এখন বড় হয়েছি বেশ কিছুটা, তাও ওই দিকে মুখ করে পড়তে বসা, কবিতা লেখা, গ্রিলের ফাঁক দিয়ে সকালের প্রথম রোদ এসে ঘুম ভাঙানোটা একইরকম রয়ে গেছে ওই জানালাটার জন্য―হ্যাঁ ওই গল্প জানালাটা….বাড়িতে থাকা ওই আনমনা নিজস্ব জানালাটা…।।

Loading

Leave A Comment